
ডেভিড রবসন, বিবিসি নিউজ
মনোযোগ এবং ঘুম নিয়ন্ত্রণের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ন্ত্রণকারী লোকাস সেরুলিয়াস ক্রমশ গবেষণার আগ্রহের বিষয়বস্তু হয়ে উঠছে।
এ বিষয়ে সন্দেহ নেই যে ঘুম আমাদের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অনিদ্রায় আক্রান্ত যে কোনও ব্যক্তিই জানেন, ঘুম না আসা কীভাবে ধৈর্যচ্যুতি এবং বিরক্তি বয়ে আনতে পারে। মাথার ভিতরে যেন একটা অদৃশ্য আলো জ্বলতে থাকে। নিজের ভিতরেই ক্রমাগত প্রতিধ্বনিত হতে থাকে একটা কণ্ঠস্বর। এই দু’টোকে নিয়ন্ত্রণ করার যে নিঃশব্দ চেষ্টা, তার সঙ্গেও অনিদ্রার সঙ্গে যোঝা ব্যক্তিরা পরিচিত বৈকি।
তারা প্রতি নিয়ত মস্তিষ্কের সেই ‘বোতাম’ বা ‘সুইচ’ খুঁজে চলেন যেটা টিপলেই মস্তিষ্কের সমস্ত ক্রিয়াকলাপকে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া যায়।
মস্তিষ্কের এমন এক ‘সুইচ’ বাস্তবে কল্পনা বলে মনে হলেও তেমনটা কিন্তু নয়। বেশিরভাগ স্নায়ুবিজ্ঞানীই এখন এই বিষয়ে একমত যে মস্তিষ্কের সজাগ থাকার মধ্যে এক ধরনের ধারাবাহিকতা রয়েছে। এই সমন্বয় স্থাপন হয় মস্তিষ্কের জটিল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে, যার কেন্দ্রস্থলে নিউরোনের একটা ক্ষুদ্র বান্ডিল রয়েছে। তার নাম- লোকাস সেরুলিয়াস। এই ল্যাটিন শব্দের অর্থ ‘নীল বিন্দু’।
লোকাস সেরুলিয়াসস্থিত নিউরোনগুলোর ওই রঙের কারণ নোরপাইনফ্রাইন নামে একটা নির্দিষ্ট নিউরোট্রান্সমিটার।
এই নীল বিন্ধুর আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ কার্যকারিতার রয়েছে- নোরপাইনফ্রাইন আমাদের শারীরবৃত্তীয় এবং মানসিক উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
দীর্ঘকাল ধরে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন যে ঘুমের সময় লোকাস সেরুলিয়াস শান্ত বা সুপ্ত থাকে। তবে এখন এই বিষয়টা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে এটা কখনওই পুরোপুরি শান্ত হয় না। এই নীল বিন্দুর বিরতিহীন ক্রিয়াকলাপ চলতেই থাকে। কখনও কখনও নিম্ন স্তরের ক্রিয়াকলাপের মাঝেই আমাদের ঘুমের গভীরতাকে নিয়ন্ত্রণ করে লোকাস সেরুলিয়াস।
এই প্রক্রিয়া আরও ভালভাবে বোঝা গেলে উদ্বেগজনিত পরিস্থিতির সঙ্গে ঘুমের (ঘুম না আসার) যে সম্পর্ক রয়েছে, তার চিকিৎসায় সাহায্য মিলতে পারে।